প্রকাশিত: Tue, Feb 14, 2023 5:08 PM
আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 2:01 PM

সাক্ষাৎকারে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি

‘রাষ্ট্রপতি হবো এটা আঁচ করতে পারিনি’

মোশাররফ হোসাইন: নব-নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যমুনা টিভিকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দায়িত্ব পালনে যদি ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দল ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে আমার করার কিছু নেই। আমি চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন সারা বিশ্ব চায়, জনগণ চায়। সবাইকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। সরকারের দায়িত্ব কী? দায়িত্ব হলো, যেসব ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, সে ক্ষমতার মধ্যে থেকে যেন সকল দায়িত্ব পালন করা। এরমাঝে কখনও রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপের দায়িত্ব পড়ে। 

তিনি বলেন, জাতীয় দুর্যোগ ও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনের পরিবেশটাকে নষ্ট করা হলে তখন কিছু কিছু কাজ করার থাকে। আমি তখন পিছপা হবো না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। এক্ষেত্রে আমার যে ভূমিকা তা রাখবো। একটা ন্যায়ভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে আমি আমার ক্ষমতাকে প্রয়োগ করবো। 

তিনি আরও বলেন, পত্র-পত্রিকায় দেখতাম, সব জায়গায় খোঁজ পেতাম, আমি তো আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম, মাঝেমধ্যে দলীয় কার্যালয়ে যেতাম, অনেক আলাপ-আলোচনা হতো; কিন্তু রাষ্ট্রপতি হবো এটা আঁচ করতে পারিনি।

সদ্য নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী যে সহিংসতা হয়েছিল তা মানবাধিকার অপরাধ। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়জয়কারের পর এটার প্রতিশোধ নিতে পারতেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। কিন্তু তিনি তা করেননি, মানা করেছেন। প্রতিশোধের রাজনীতি করেননি তিনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা একসাথে রাজনীতি করার আহ্বান জানান। কিন্তু আসে না তো। পিজি হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। কিন্তু তারা নাম নেয় না। পিজি হাসপাতাল বলে।

ঐক্যবদ্ধের জন্য আপনি কী নতুন কোনো উদ্যোগ নেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করি। দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ আমাকে যে মহান দায়িত্ব দিয়েছে, তাতে আমার প্রথম কাজ কাজ হলো, জাতীয় বিভেদকে ঐক্যে পরিণত করা। আমি চেষ্টা করবো। আমার কোনো ঐশ্বরিক শক্তি নেই। আমি মনে করি, দেশের অগ্রগতির জন্য একদিন এটা হতেই হবে। সংঘাত নয়, সমঝোতার মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে আসতে হবে। এটা এখন চ্যালেঞ্জ।

নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি একাত্তর টেলিভিশনকে বলেন, সংবিধান বলে রাষ্ট্র আমাকে যেটুকু অধিকার দিয়েছে, সেটুকু যেন আমি পরিপূর্ণ করতে পারি। আমি আল্লাহর কাছে সেই প্রার্থণা করি। আল্লাহ যেন সেই শক্তিটা দেন। আমাকে আল্লাহ যদি জীবন দেয় সেই নির্বাচন (আগামী নির্বাচন) পর্যন্ত, আমি একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেখে যেতে চাই। এটাই আমার চরম প্রত্যাশা।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, গতকাল (রোববারের) আগের দিন রাতে বলা হয় যে গণভবন যেতে হবে। যাওয়ার পরে দেখি যে সিনিয়র লিডাররা, মানে আমাদের পার্টির সেক্রেটারি থেকে শুরু করে তথ্যমন্ত্রীসহ অন্য সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা উপস্থিত। তখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) একটি ফর্ম দেন সেক্রেটারির কাছে এবং ওই ফর্মের প্রথম অংশে প্রস্তাবক এবং পরের অংশে সমর্থক। তো এই ফর্মের একটি অংশ পূরণ করলেন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদের এবং আরেকটি আমাদের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আমি একটু দূরে বসে ছিলাম। তখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, তিনি আমার নাম নিয়ে বললেন, তাকে আমি রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন দিতে চাই। সবাই তখন একবাক্যে তা সমর্থন দেন এবং প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাইন করতে বলেন। আমি তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। টু বি ভেরি ফ্র্যাঙ্ক, আমি এটা ভাবতে পারিনি। আমাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি নিয়োগ দেবেন, সে ধরনের ধারণা তো ছিল না। কোন দাঁড়িপাল্লার মাপে আমি উতরে গেলাম এই পদের জন্য, আমি নিজেও বুঝিনি।

তিনি বলেন, অনেক কাজই রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করে থাকেন। তবে অনেক সময় দেখা যায়, নির্বাচনের সময় কোনো ক্রাইসিস হলো। ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে এগিয়ে আসতে হয়। তখন রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতাবলে সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। কাজেই রাষ্ট্রপতির যে কোনো দায়িত্ব নেই, তা নয়। রাষ্ট্রপতি একটি ঐক্যের প্রতীক এবং সে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে রাষ্ট্রপতি তার দায়িত্ব পালন করেন সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে। রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে আমি মনে করি, উই উইল হ্যাভ টু অ্যাবাইট দ্য কনস্টিটিউশন। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব